দ্য ক্যালকুলাস অ্যাফেয়ার

— “এত করে বলছি, তাও কথাটা রাখবে না? অন্তত আমাদের এতদিনের সম্পর্কের কথাটা তো ভাবো। ”
— “মানছি। কিন্তু সত্যি বলছি, যা পেতে পারো বলে ভাবছ, তা আমার কাছে নেই।”
—“সেই, সে কথা তো বলবেই। যখন আক্কেল দাঁত নিয়ে ব্যথায় কাতর, তখন কে দেখেছিল? যখন ফ্রীতে গাদা গাদা লিস্টেরাইন আর ফ্লসের দরকার পড়ে, তখন কার কাছে ছোটো? আর আজ আমার এত বড় বিপদ, তুমি পাশে থাকবে কেন?”
—“সত্যি, সত্যি, সত্যি – তিন সত্যি করে বলছি।”
—“আমি বিশ্বাস করি না, আর তুমি বলার কে হও? কি যোগ্যতা আছে তোমার এ নিয়ে কথা বলার?”
—“তা ঠিক, তবে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েই বা কি লাভ বলো?”
—“যাক, এসব ইমোশনাল ভ্যানতাড়ায় চিঁড়ে ভিজবে না এ আমি জানতাম। আসল কথায় আসি। দেখা দিলেই একশ ডলার দেব। আর বাকি সময়টার জন্য আরো একশ।”
—“ছি ছি! টাকার কথা আসছে কেন? কি বিপদ।”
—“নাহ, আসবে না, ন্যাকা! আর কি চাও? ফ্রী ব্রেকফাস্ট? পাবে। ফ্রী লাঞ্চ? তাও পাবে।”

—“শোনো, শোনো……”
—“না, আমি আর শুনতে পারছি না (ফোঁপানি)। তুমি এত হৃদয়হীন কেন? তোমাকে সত্যি বন্ধু বলে ভেবেছিলাম। ওদিকে দেখ, মাইক, শেলবী, ক্যামিল সব্বাই কাউকে না কাউকে যোগাড় করে ফেলেছে। শুধু বাকি রয়ে গেছি আমি, কারণ কি জান? কারণ আমি তোমার ওপর ভরসা করেছিলাম। আর তুমি? আমার সবথেকে বিপদের দিনে ফিরেও তাকাচ্ছ না।”
—“আরে খেলে যা, ডক্টর জেকবস কে জিজ্ঞাসা করে দেখো। এই তো তিন মাস আগেই রেগুলার চেকআপে গেছিলাম। কিচ্ছুটি পান নি।”
—“পুরো ঢপ। জেকবস তোমাকে দেখলেই আমাদের ক্লাস শুদ্ধ সবাইকে ধরে নিয়ে আসেন, আজ অবধি অন্যথা হয়নি।”
—“মাইরী বলছি। ফাস্ট ফুড খাই না, কোক খাই না, প্রসেসড মীট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। এমনকি প্রত্যেকবার খাওয়ার পর কুলকুচি করি। জেকবস তাই শেষ বার একটা কাষ্ঠহাসি উপহার দিলেন, এত উন্নতি দেখে মনে মনে বেজায় চটেছেন।”
—“যাক, তোমার গল্পকথা শোনার সময় আমার নেই। আমি আসি, আর আমার সঙ্গে দেখা করার কোনোদিন চেষ্টা করবে না।”
—-“শোনো, শোনো – ক্যালকুলাস ছাড়া অন্য কিছু থাকলে চলবে না? লাস্ট কয়েকদিন ধরে খালি মনে হচ্ছে কয়েক দানা খাবার পেটে যাওয়ার আগেই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ওতে কিছু হেল্প হবে?”

বিব্রতকর নীরবতা

—“হ্যালো, হ্যালো?”
—“(ফোঁপানি) আমি ((ফোঁপানি) জানতাম (ফোঁপানি) তুমি আমাকে (ফোঁপানি) ফিরিয়ে দেবে না।”
—“তাহলে চলবে?”
—“রুট ক্যানাল, রুট ক্যানাল……ইয়েএএএএ! খুব ভালোবাসি।”
—“সেকি, সেকি! না না…হ্যালো, হ্যালো!”

আর না না, এক্ষুনি মেল পেলাম – শ্যারনের ডেন্টিস্ট্রির ফাইনাল পরীক্ষায় আমাকেই সিলেক্ট করা হয়েছে ওর পেশেন্ট হিসাবে। ডেন্টাল স্কুলের ডীন অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন, আর সঙ্গে একটা ফর্ম –  নিজের প্রাণ থুড়ি দাঁত যে সজ্ঞানে চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি পরিকল্পে ধার দিচ্ছি, সেটা কনফার্ম করার জন্য।

জুন মাসের ঠান্ডাতেও টের পেলাম কপালে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম জমেছে।

3 thoughts on “দ্য ক্যালকুলাস অ্যাফেয়ার

  1. কি ভয়ংকর! সুদন্ত হবার যে এহেন যন্ত্রণা কে জানত? লোকের হাত ধরে অনেকেই টানাটানি করে, কিন্তু দাঁত ধরেও যে করে এই প্রথম জানলাম। দন্তরুচি কৌমুদী।

    Like

    • প্রত্যেক বছর ৭০ জন মতন বছরের এই সময়টা পরীক্ষা দেয় – ডেন্টিস্ট্রি লাইসেন্স পাওয়ার জন্য; রুট ক্যানাল, জেনারাল ক্লীনিং, টুথ এক্সট্র্যাকশন আর আর একটা কি যেন! রোগী পাওয়ার জন্য রীতিমতন হাহাকার চলতে থাকে। বুঝতেই পারছ প্রায় তিনশ’র মতন রোগী লাগবে, যদিও একজনের দাঁত ৩/৪ টে কোয়াড্রান্টে ভাগ করে তাকে তিন চার বার পেশেন্ট সাজানোও যায়।

      Like

Leave a comment