হরর স্টোরি, শেষবার

বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ ঘুম না এলেই বেশ কিছু চিন্তা নিয়ম করে মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। নিজের মৃত্যু সম্পর্কিত চিন্তাটা বহুদিন ধরেই সেগুলোর মধ্যে প্রধান, হয়ত সব থেকে যুক্তিযুক্ত-ও। আমিটাই নেই, আর সব কিছু আছে এ কি ভাবা যায়? সব কিছু তো সব কিছু কারণ আমি তাই বলেছি , আমি নিজে দেখেছি, আমিই ডিফাইন করেছি। আমিই যদি চলে যাই, সেই সব কিছুরও কি আমার সাথে চলে যাওয়াই উচিত নয়? কই তা তো হয় না, নাকি তাই হয়? লোকে বলে বটে তা হয় না, কিন্তু চলে যাওয়ার পর কে আর দেখতে যাচ্ছে! একটা ভয় বড় বেশী করে চেপে ধরত , কখন চলে গেলাম যদি নিজেই জানতে না পারি। মানে একটা অ্যাটাক হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছি, আধো-ঘুম আধো-জাগরণের মধ্যে অ্যাগোনির থেকেও টেনশনটা বেশি হচ্ছে, এরকম একটা ব্যাপার আমার কাছে বেশি কম্ফরটেবল – যতই আয়রনিক শুনতে লাগুক না কেন। কিন্তু কিচ্ছু বুঝলাম না, আর চলে গেলাম এর থেকে ক্রূর মৃত্যু আর কি হতে পারে? অত প্রশান্তির মৃত্যুকে আমি ভয় পাই, খুব। ওর থেকে বেশী রিক্ত, নিঃসঙ্গ অবস্থায় চলে যাওয়া যায় না।

নিঃসঙ্গ আমি নই, কারণ আমি চিন্তা করতে পারি। নিঃসঙ্গ আমি নই, কারণ আমি প্রবল মাত্রায় সেলফ-কনসাস। নিঃসঙ্গ আমি নই, কারণ  যখন স্বপ্প দেখতাম তখনো জানতাম যে স্বপ্ন দেখছি। আর তাই যাওয়ার সময় জ্ঞানটুকুও থাকল না, এ বড় ভীতিপ্রদ ব্যাপার আমার কাছে।

স্বপ্ন দেখতাম কেন বলছি? কারণ আর চোখে ঘুম নেই। শুতে যাই নিয়ম করে, উঠেও পড়ি নিয়ম করে – কিন্তু ওইটুকুই। জীবনের সব অতৃপ্তিকে জড়ো করে রেহাই পেতে চেয়েছি ঘুমের থেকে, সে বড় কঠিণ পরীক্ষা। কিন্তু পেরেছিলাম।

কিন্তু আজ আর পারছি না। জীবন সততই অতৃপ্ত নয়, কোথাও যেন পরিপূর্ণতা পাবেই। আর তাই সেই ভয়টা ফিরে এসেছে, কিছুতেই ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না।

স্পষ্ট বুঝতে পারছি ঘুম আসছে, মনে হয় না স্বপ্ন বোঝার সময় থাকবে। কিন্তু নিঃসঙ্গ আমি এখনো নই।

Image (উৎস – গুগল ইমেজেস)

9 thoughts on “হরর স্টোরি, শেষবার

  1. কোথাও কখনো একবার পড়েছিলাম যে মৃত্যুর ঘটনায় মানুষ এত বিচলিত হয়, তার একটাই কারণ – প্রত্যেকটা মৃত্যুর পরোক্ষ অভিজ্ঞতা আমাদের নিজেদের নশ্বরতার কথা মনে পরিয়ে দেয়। তোমারও কি সেই একই অবস্থা? আমার অভিমতটা একটু আলাদা। আমি জানি যে একদিন সকলেই যাবে, আমিও যাব। একবার চলে গেলে আর কিছুই – ভাবনা, চিন্তা, দুশ্চিন্তা, অস্তিত্বসংকট ইত্যাদি – ছুঁতে পারবে না; ডান, ফিনি, দ্য এণ্ড। আমার যুক্তিবাদী মন বলে, যে জিনিষের ওপর আমার কোন কন্ট্রোল নেই, তা নিয়ে চিন্তা করা মানে অযথা সময় নষ্ট। তার বদলে, যেটুকু সময় এখানে আছি, তার মধ্যে যতটুকু সম্ভব অন্য মানুষজনের জন্য কিছু করতে পারা, সেই চেষ্টাটাই আমার কাছে সফলভাবে বেঁচে থাকার পরিচায়ক।

    Like

    • কৌশিক দা, অস্বীকার করব না – মৃত্যুচিন্তা আমারও আসে, সে নিয়ে কখনোসখনো নিশ্চয় ভাবি। তবে এই পোস্টটায় মৃত্যুর থেকেও বেশী ফোকাস নিঃসঙ্গতায়। আর এটা ফিকশন।

      Like

    • সন্ময়দা, তোমাদের জন্যই লেখা। এত ভালো সাপোর্ট সিস্টেম অনেক ভাগ্য করে পেতে হয়, সিরিয়াসলি।

      Like

  2. Sanmay Bandyopadhyay says:

    Kausik, juktibadee amra anekei, tai boley ki mrityu mrityu romanticotake jeebon theke baad dewa jayy? Mrityu paa tipei asuk, ba ghorrsawar er mawtoi asuk, bilol kawtakkhei shesh korey dik, je bhabei asuk na keno, bhari shourjyomoy jinis. Ahornishi mrityuchintar kawtha moteo bolchhi na, morey morey bneche thakar kawtha to akdom i bolchhi na, kintu meh dekhte jerokom bhalo laage, ashani sanket o.

    Like

  3. মৃত্যু মৃত্যু রোমান্টিকতা? যাদের জীবনে আর কোন উৎসাহ নেই, স্বার্থপর-এর মত যারা একমাত্র নিজেদের জীবন, নিজেদের গণ্ডী নিয়েই ব্যস্ত, এসব বিলাসিতা তাদেরই সাজে বটে। ডেথ ইস অ্যান এণ্ড। মৃত্যুর পরে আর কিছু থাকেনা, অনলি নাথিংনেস – যে কোন মানুষের নিজস্ব পরিপ্রেক্ষিত থেকে বলছি। সেই শূন্যতার চিন্তায় দিনাতিপাত করলে জীবনের স্বাদ গন্ধ স্পর্শ কিছুই অনুভব বা উপভোগ করা যায়না, বুঝে ওঠা যায়না যে “তবুও প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা, বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্ররাগে”।

    Like

  4. Sanmay Bandyopadhyay says:

    Tai? hawbe.aar mrityur por kichhu nei se ami jani, seta niye kichhu bolioni. tomar oisob description gulo ki amar khetre khatey boley tomar mone hoyechhe?

    Like

Leave a reply to Prabirendra Cancel reply