বেলা দশটার দিকে রোদ যখন বেশ ঝলমলিয়ে ওঠে, তখন অফিসের জানলা দিয়ে দূরে ‘সী অফ মারমারা‘ বেশ স্পষ্ট দেখা যায়। বেশ মজাই লাগে; এই এতক্ষণ ধরে মনে হচ্ছিল দূরে শুধুই আকাশ আর তার মাঝে একটা ফুটকির মতন কালো মেঘ আর সূয্যিমামা দেখা দিলেই বোঝা যায় দিকচক্রবাল ভারী ঠকাচ্ছিল, আকাশের অনেকটাই আদতে জল আর কালো ফুটকিটা ছোট্ট একটা দ্বীপ বোধহয়। মারমারা কথাটা শুনে ইস্তক মনটা কি যেন হাতড়াচ্ছিল, কি যে সেটাই ঠাহর হচ্ছিল না। তারপর যেই উইকিদেবতা জানালেন কথাটা আদতে এসেছে গ্রীক শব্দ মারমারন থেকে, তক্ষুনি বুঝলাম রহস্যটা কি। মারমারন বলুন কি মারমারা, সবই বোঝায় মার্বল (যা নাকি ওখানকার দ্বীপে প্রচুর পরিমাণেই পাওয়া যেত এককালে); আর মার্বলের শুদ্ধ বাংলা বা সংস্কৃত? ভাবুন, ভাবুন! অ্যাই তো, এতক্ষণে ঠিক মনে পড়েছে – মর্ম্মর! অ্যামেচার এটিমোলজিস্টরা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন উত্তেজনার যথেষ্ট কারণ আছে। এটা দেখেই আমার এক টার্কিশ কলীগের সঙ্গে বসে গেলাম দু’ভাষাতে কমন শব্দর একটা লিস্টি বানাতে (ওকে অবশ্য বলিনি যে আদতে বাংলা ভাষাই ঋণী) – আদালত, দুনিয়া, আয়না, দোস্ত আরো কত শত শব্দ যে বেরোল। আগের উইকএন্ডে যে ইস্তানবুলের রাস্তায় ‘পেয়খানা’র-ও দেখা পেয়েছি, সেটা অবশ্য বেমালুম চেপে গেলাম।
বেশ কিছু পাকিস্তানি এম-বি-এ ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে আলাপ হল। প্রতি বছরেই তিন-চার জন করে আসে , এবারে একসঙ্গে সাতজন পড়তে এসেছে। কয়েকজন এসেছে লাহোর ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স থেকে, বাকিরা লাহোরেরই ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স থেকে। নাম প্রায় এক হলেও দুয়ের মধ্যে বিস্তর রেষারেষি। ভারতীয় অধ্যাপক শুনেই সব বিস্তর চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিল, “এই ব্ল্যান্ড তুর্কী রান্না খাচ্ছেন কি করে?”, “কবে বিরিয়ানি রেঁধে খাওয়াবেন আগে বলুন?”, “তাকসিম স্ক্যোয়ারের কাছে শুনেছি একটা ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁ আছে, ট্রাই করেছেন?” ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা জিনিস বোঝা গেল যে এরা সবাই বিরিয়ানি জিনিসটা ভারী মিস করছে। পাকিস্তানীদের বিরিয়ানি রেঁধে খাওয়াব অত সাহস এখনো আসেনি, তাই বাড়িতে নেমন্তন্ন তৎক্ষণাৎ না করতে পারলেও কথা দিলাম ‘সোয়াদ’-এ গিয়ে একবার সবাই মিলে খেয়ে আসব। আমার কিন্তু টার্কিশ রান্না দিব্যি লেগেছে, ইউনিভার্সিটি কাফেটেরিয়াতে অলমোস্ট বাড়ির স্টাইলে রান্না করে। যদিও ‘কেবাব নেশন’ হিসাবেই এ দেশ পরিচিত, এরা কিন্তু রান্নায় প্রচুর পরিমাণে দেশী বেগুন, বিলিতি বেগুন আর ইয়োগার্ট ব্যবহার করে। সুস্বাদু খাবারকে কেন ব্ল্যান্ড বলছে ভাবতে গিয়ে খেয়াল পড়ল বহুদিন আগে পড়া এই সত্যি ঘটনাটা –
বাজপেয়ী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন ইসলামাবাদ ( এদিকে মুশারফের চ্যালাচামুন্ডারা উল্টোদিকের বাসে করে কার্গিল যাচ্ছিল , বাজপেয়ী সেটা টের পান নি), সঙ্গে গেছেন বেশ কিছু ভারতীয় সাংবাদিক। দুপুরের খাবার খুঁজতে বেরিয়ে ঢুকেছেন রাস্তার পাশের এক দোকানে। মুঘলাই রান্নার বেজায় খোশগন্ধ বেরোচ্ছে, বাঙ্গালী এবং উত্তর ভারতীয়দের জিভ দিয়ে জল পড়ে আর কি। বাধ সাধলেন দক্ষিণী সাংবাদিকরা, ভেজ ডিশ পাওয়া যায় কিনা সেটা আগে কনফার্ম করতে হবে। ইতিমধ্যে বিশালদেহী পাঠান মালিক চলে এসেছেন, ভারতীয় পত্রকার শুনে বিশেষ সমাদরে তাঁদেরকে ভেতরে নিয়ে যেতে তৈরী। দক্ষিণী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানালেন আলবত ভেজ ডিশ পাওয়া যাবে! বেফিকর তসরিফ রাখার অনুরোধ জানিয়ে কথা দিলেন কোনো সমস্যা হবে না। তা কিছুক্ষণের মধ্যেই গরম গরম নন-ভেজ ডিশ চলে এল, কিন্তু ভেজ প্রিপারেশনের আর দেখা মেলে না।বাঙ্গালী জিভ প্রায় জলশূন্য হয়ে যায়, কিন্তু ভদ্রতা বলেও একটা ব্যাপার আছে। আরো বোধহয় মিনিট চল্লিশ পর অবশেষে ভেজ ডিশের আগমন – বিশাল বাটি ভর্তি বড় বড় মাংসের টুকরোর চোখ জুড়িয়ে দেওয়া, মন উদাস করে দেওয়া ঝোল। আর অবশ্যই সঙ্গে কিছু সব্জীর টুকরো।
তাই টমেটো, বেগুন আর ইয়োগার্টের মধ্যে মাংস ঠেসে দিলেও ব্ল্যান্ড যে লাগবে, তা বলা বাহুল্য!
(স্থিরচিত্র উৎস – Google images, http://en.loadtr.com/Marmara_Sea-404337.htm)
Veg dish-er byapaar-taa eirokom-i awnumaan korechhilaam; similar ek khaan goppo achhe Assam-er prekkhapot-e, sei jonye. Kintu status update-e bhojon-shala’r maalik-raa thanda samlaate khoriddar-mehman der je aador diye thaaken, shona ishtok mon ush-khush korchhe!
LikeLike
aamader ekahne besh kichhudin thakar plan. sujog pele ekbar ghure ja. Istanbul abdhi chole aay, bakita aamader dayitto. blanket -o peye jabi 🙂
LikeLike
arro chal golpo 🙂 besh laglo porte!
LikeLike
Satyajit ‘Gorosthane shabdhan’ goppe ei ‘marmore<mormor' byapar-ta bujhiyechhilen. Shekhane aboshyo utsho-bhasha chhilo Latin. Tobe ei apaatobhabe awnatmiyo bhasha-der modhye ei meel-gulo khunje pele bhari mawja laage.
LikeLike
eTa bhaalo mone koralen to! Bari fire ekbar dekhte hobe Satyajıt exactly ki bolechhilen.
LikeLike
মজাদার লেখা। আরো চাই।
LikeLike
বাঃ বাহ্ বাহ্ 🙂
LikeLike
দিব্যি লেখা।
বাংলা মর্মরের উৎস সংস্কৃত নাও হতে পারে। উর্দুতে শ্বেতপাথরকে সং-মর্মর বলে (সং = পাথর)।
মর্মরও পশ্চিম থেকে এসেছে হয়তো।
LikeLike