আদালতে কথোপকথন : ইসমত – মান্টো

ইসমত

ডিনার টেবলে  তোমার কথাই হল সেদিন, অক্লেশে

বলল “মান্টোকে তো চিনল না কেউ, বুঝলে সই”;

“বটে?” বলে মুচকি হেসে তাকিয়ে দেখি চেঁচাচ্ছে সে

“কি আশ্চর্য! এত্ত দেরী, পাজামা কই?”

 

মান্টো 

তবে! নাঙ্গা এত ঘুরছে লোকে, বলছে কথা,

লাহোর কোর্টে উঠবে তারা কোনোদিনে?

বন্ধ করে উঁকিঝুকি এদিকসেদিক  (যথা,

লেপের তলা)  জাজ বলবে “আসল দোষী নিলাম চিনে”।

 

ইসমত

দোষী চেনা সহজ নাকি? লাগবে না ধক্,

মান্টোভাই? আজকে যদি ‘দোজখি’ পড়ে শফিয়া বলে,

“খারাপ, খারাপ, খারাপ বেশক্,

মরা ভাইকে নিয়েও ডাইনীর কলম চলে”।

 

মান্টো 

পাঠক যা চায় বলবে, বদ্ নসিবে জ্বলবে, খুশ্ কিসমতে গলবে;

আমার প্রশ্ন অন্য,

সিনা যারা নিচ্ছে ছিঁড়ে, এবং বলছে ‘চলছে, চলবে’

সিনা নিয়ে লিখছি বলে কি তাদের থেকেও বন্য ?

 

ইসমত

সিনা এরা দেখল কোথায়? পাশেতেই মজুত বলে?

ও তো স্রেফ দলিত মথিত বস্তু জড়।

আঁধার রাতে হাতে নিয়েও পায় না, ফলে

দিনদুপুরে কাছারিতে আজ সওয়াল বড়!

 

মান্টো  

ওই দেখো বাদীর উকিল ডাকছে, তওবা-তওবা হাঁকছে

গুনাহ বলে গু্নাহ! নাকি

সারা লাহোর রাগে কাঁপছে ,

এখন শুধু মুখটা ঢেকে কোতল করাই বাকি।

 

ইসমত

এদিকেতে আরেক হুজুর বলছে কানে ,

চাইলে ক্ষমা, মিটিয়ে দেবে খরচাপাতি,

কথাটা যেন সেঁধোয় ভেতর প্রাণে

নাহলেই আদেশ হবে “ধর চাপাতি”।

 

মান্টো  

খারাপ শব্দ চলছে খোঁজা, প্রশ্ন আসে

ভদ্র ঘরের মেয়ের কি কাজ ‘আশিক’ ধরা  ?

এইবারেতে বিচারপতি অল্প কাশে,

ভদ্র কোথায়? বেশ্যা যখন, কি আর করা।

 

ইসমত

বেশ্যা বলেই ছাড় পেয়েছে শব্দরা সব,

‘আশিক’ কিন্তু ‘সিনা’র কাছে ফিরবে আবার

লাহোরে শুনতে পেলে ‘হোক কলরব’,

ইসমত-ও জানবে সময় ফেরত যাবার।

 

 

১। ইসমতের বিচার চলছিল ‘লিহাফ’ (লেপ) গল্পের জন্য,  উর্দু সাহিত্যে প্রথমবারের জন্য কোনো লেখিকাকে সমকামিতা নিয়ে লিখতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছিল অবিভক্ত ভারত। যদিও সরকারপক্ষ অশ্লীল বিষয়বস্তুর থেকেও বেশী কথা বাড়ায় অশ্লীল শব্দ নিয়ে, যেমন ‘আশিক’।

২। ‘দোজখি’ ইসমতের আরেকটি গল্প, নিজের মৃত ভাইকে নিয়ে লেখা। মান্টোর বোন এবং স্ত্রী (শফিয়া) দু’জনেরই খুব অপছন্দের গল্প।

৩। ‘বু’ গল্পে ‘সিনা’ শব্দটি ব্যবহার করার জন্য কোর্টে তোলা হয়েছিল মান্টোকে,  ছ’বারের একবার।

 

১৫ই অগস্ট পূর্ণ হল ইসমত চুঘতাই-এর জন্মের একশ বছর।

 

 

Ismat-Manto