ফেসবুকের বন্ধুদের দৌলতে এ সপ্তাহে প্রায় অবিশ্বাস্য একটি ট্রেলর দেখলাম, বাংলা সিরিয়ালের। অবিশ্বাস্য কেন? কারণ ৩৬ সেকন্ডের জন্য ভুলে গেছিলাম সালটা ২০১৬। সাড়ে বত্রিশ ভাজার যেসব পাঠকরা এখনো এ ট্রেলর দেখে উঠতে পারেননি তাঁদের জন্য রইল ইউটিউবের লিঙ্ক,
ক্যারলকে ধন্যবাদ, অপ্রাকৃত চুল এবং অসম্ভব উচ্চারণ নিয়ে উদয় হওয়ার পরেও ওনার দৌলতে বেশ কিছু বিস্মৃতপ্রায় মানুষের কথা মনে পড়ে গেল। আজ সাড়ে বত্রিশ ভাজার পাতায় তাঁদের কে নিয়েই দু’চার কথা থাকল, সেই সব বাঙালি মেমবউ কদাচিৎ স্মরণে আসেন যে !
রেবেকা ম্যাকভিটিস এবং এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়া
শুরুতে বলে রাখা ভালো, উইকিপিডিয়ায় গেলে দেখবেন হেনরিয়েটার বদলে লেখা আছে আঁরিয়েতা। কিন্তু গোলাম মুরশিদ ‘আশার ছলনে ভুলি’ বইটিতে যথেষ্ট যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন হেনরিয়েটা আদৌ ফরাসী ছিলেন না। আমিও গোলাম মুরশিদকে অনুকরণ করে হেনরিয়েটাই লিখলাম।
মাইকেল মধুসূদনের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রেবেকা ম্যাকটিভিস, আর দ্বিতীয়া স্ত্রী হেনরিয়েটা। অন্তঃসত্ত্বা রেবেকা স্বাস্থ্য ফেরানোর অভিপ্রায়ে যখন দূরদেশে তখনই মধুসূদনের সঙ্গে হেনরিয়েটার প্রণয়ের সূত্রপাত। রেবেকার জন্য তো ট্রাজেডি বটেই, হয়ত হেনরিয়েটার ট্রাজেডিরও এখান থেকেই শুরু। গোলাম মুরশিদ জানিয়েছেন অনাথ রেবেকার শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি, কিন্তু হেনরিয়েটা শিক্ষিতা ছিলেন। হয়ত সে কারণেই মাইকেল ক্রমে ক্রমেই রেবেকার থেকে দূরে সরে গেছিলেন। চার সন্তান সহ অসহায়া রেবেকাকে ছেড়ে হেনরিয়েটার সঙ্গে ঘর বেঁধে মাইকেল যা অন্যায় করেছিলেন তার তুলনা মেলা ভার। মাইকেল মধুসূদনের আরেক জীবনীকার যোগীন্দ্রনাথ বসু জানিয়েছেন রেবেকার প্রতিবাদী কন্ঠস্বর ছিল। স্বামীর খামখেয়ালিপনা নিয়ে কথা শোনাতেন, শেষে মধুসূদনের বিশ্বাসঘাতকতা ধরা পড়ে যাওয়ার পর তিনি নিজেই সংসারে থাকতে অস্বীকার করেন। হেনরিয়েটা কিন্তু মাইকেলের সব সিদ্ধান্তই মুখ বুজে মেনে নিতেন। শুধু তাই নয়, মাইকেলের সাহিত্যসঙ্গিনী হওয়ার লক্ষ্যে হেনরিয়েটা বাংলাও শিখতে শুরু করেছিলেন। হেনরিয়েটা না থাকলে মধুসূদন নির্বিঘ্নে সাহিত্যসৃষ্টি আদৌ করতে পারতেন কিনা সে নিয়েও বহু গবেষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
রেবেকা এবং হেনরিয়েটা দু’জনের সঙ্গেই মধুসূদনের আলাপ মাদ্রাজে, সেই মাদ্রাজ থেকেই হেনরিয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে মধুসূদন কলকাতায় আসেন ১৮৫৫ সালে। রেবেকা অতি কষ্টে চার সন্তানকে বড় করেছিলেন কিন্তু আর বিয়ে করেননি। ১৮৯২ সালে রেবেকা মারা যান টিবি রোগে, তাঁর নামের পেছনে তখনো লাগানো ছিল ‘ডাট’ পদবীটি। অথচ তারও উনিশ বছর আগেই মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে মারা গেছেন হেনরিয়েটা এবং মধুসূদন, কপর্দকশূন্য অবস্থায়। মধুসূদনের অমিতব্যয়িতাকে হেনরিয়েটা কোনোদিনই শুধরোতে পারেন নি, উপরন্তু কবির খামখেয়ালিপনা এবং কদাচিৎ দুর্ব্যবহারে বিদ্যাসাগরের মতন শুভানুধ্যায়ীরাও সরে গেছিলেন। হেনরিয়েটার সঙ্গে বিদ্যাসাগরের একটি প্রীতিমধুর সম্পর্ক ছিল, খানিকটা হেনরিয়েটার কারণেই বিদ্যাসাগর বহুদিন ধরে মাইকেলকে আর্থিক সাহায্য করে গেছিলেন। কিন্তু বিধি বাম, হেনরিয়েটা যখনই সংসারকে সামান্যটুকুও স্থিতি দিতে চেয়েছেন, মধুসূদন নিজেই একটা দুর্দম ঝড়ের মতন এসে সেই স্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দিয়ে গেছেন।
নেলী সেনগুপ্ত
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাউনিং কলেজে বি-এ ডিগ্রী নিতে এসেছিলেন যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। আর সেখানেই আলাপ এডিথ এলেন গ্রে-র সঙ্গে। অবশ্য এডিথের সঙ্গে আলাপ হওয়ার সময় যতীন্দ্রনাথ আইনের ডিগ্রীও নিয়ে নিয়েছেন। এডিথকে আইনের পাঠ না দিলেও সন্দেহ নেই যতীন্দ্রমোহনের স্মার্ট পারসোনা টি এডিথের মনে বিশেষ ছাপ ফেলেছিল। বিয়েতে কোনো পক্ষেরই মত থাকার কথা নয়, তাই বিয়ে মুলতুবি রেখে যতীন্দ্রনাথ ফিরে আসছিলেন দেশে। পরে মত বদলে এডেন থেকে ফিরে যান কেম্ব্রিজে, এবং এডিথকে বিয়ে করেই কলকাতায় ফেরেন। যতীন্দ্রমোহন মধুসূদনের মতন খামখেয়ালি ছিলেন না কিন্তু রাজনীতি এবং দেশোদ্ধারের টানে হাইকোর্টের তুমুল পসার ছেড়ে দেন। সেই সময় হেনরিয়েটার মতনই নেলীকেও দাঁতে দাঁত চেপে সংসার চালাতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক কারণে যতীন্দ্রমোহন কলকাতা ছেড়ে চলে যান চট্টগ্রামে, এবং সেখানে বহুবার কারাবরণ করেন। যতীন্দ্রমোহনের সঙ্গে নেলীকেও তখন বেশ কয়েকবার যেতে হয়েছিল জেলে। আর এই সময় থেকেই নেলীরও একটি নিজস্ব রাজনৈতিক সত্ত্বা বিকশিত হতে থাকে। তারই ফল, ১৯৩৩ সালে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হওয়া। নেলির আগে মাত্র দু’জন মহিলাই কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের পদ পেয়েছিলেন, অ্যানি বেসান্ত এবং সরোজিনী নাইডু।
ছেচল্লিশের সেই ভয়াবহ দিনগুলির সময় নেলী দাঙ্গা থামাতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। হয়ত সেই কারণেই এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে তাঁর একটা আত্মিক সম্পর্ক থাকার কারণে নেহরু দেশভাগের পরে নেলীকে চট্টগ্রামেই থাকতে অনুরোধ করেন। নোয়াখালির দাঙ্গার পর সংখ্যালঘুদের ভরসা দেওয়ার জন্য নেলী সেনগুপ্তর মতন কোনো ব্যক্তিত্বকেই দরকার ছিল। প্রায় আমৃত্যু ছিলেন সেখানে, জীবনের শেষ বছরটায় কলকাতার ফিরে আসেন চিকিৎসার কারণে।
লীলা রায়
‘মেমবউ’ এর ক্যারলের উচ্চারণ শুনে আমার সবার আগে লীলা রায়ের কথাই মনে পড়ল। না লীলা রায় ওরকম অবাস্তব অ্যাক্সেন্ট নিয়ে কথা বলতেন না, বরং সাধারণ কথোপকথনের সময়েও সাধু ভাষাতেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন। তবে ওনার কথা বলার ভঙ্গীটি নিয়ে সেই বিখ্যাত গল্পটি মনে পড়ে গেল (যেটি আমি সম্ভবত পড়েছিলাম কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘মজলিশ’ বইটিতে)। মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে দেখা করতে গেছেন অন্নদাশঙ্করের সঙ্গে, বাইরের বাগানে দেখেন লীলা রায় কাজ করছেন। লীলা জানালেন অন্নদাশঙ্কর দেখা করতে পারবেন না। কেন? ‘উনি সৃষ্টির কাজে ব্যাপৃত আছেন।’ মুজতবা একটু মনঃক্ষুণ্ণ সম্ভবত, মনে মনে বললেন, ‘তাহলে আপনি এখানে কি করছেন?’।
লীলা রায়কে নিয়ে একটি চমৎকার লেখা পাওয়া যায় অন্তর্জালে, যেটি লিখেছেন স্বয়ং আনন্দরূপ রায়, অন্নদাশঙ্কর এবং লীলার পুত্র। উৎসাহীরা এখানে দেখতে পারেন। টেক্সাসের মেয়ে অ্যালিস ভার্জিনিয়া অর্নডর্ফের নাম লীলা রেখেছিলেন অন্নদাশঙ্কর নিজেই। নামকরণ প্রসঙ্গে ‘মনস্বী অন্নদাশঙ্কর’ বইয়ে ‘জীবন কথা’ প্রবন্ধে সুরজিৎ দাশগুপ্ত লিখেছেন, ”লীলা হল সৃষ্টি আর সৃষ্টির মধ্যেই স্রষ্টার প্রকাশ। আর এই স্রষ্টাই হলেন পরমসত্তা। এখন থেকে ঘরনির মধ্যে অন্নদাশঙ্কর দেখলেন অন্যতম সৃষ্টির লীলা।’ এই সময় অন্নদাশঙ্কর ‘লীলাময় রায়’ ছদ্মনামেও লেখালেখি করেছেন। দেশে পুরোপুরি থিতু হয়ে যাওয়ার পর পশ্চিমী আদবকায়দাগুলো ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য লীলা রায়ের শরণাপন্ন হতেন অন্নদাশঙ্কর, অথচ এই লীলাই বাড়িতে দিব্যি শাড়ি আর কার্ডিগান পরে ঘুরে বেড়াতেন।
লীলা কলকাতায় এসেছিলেন ১৯৩০ সালে, তারপর প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে সাহিত্যচর্চার নিরলস সাধনা করে গেছেন। ক্ষিতিমোহন সেনের বাংলার বাউল নিয়ে বইয়েরও যেমন অনুবাদ করেছেন, তেমনই অনুবাদ করেছেন সত্যজিৎ রায়ের ‘ফটিকচাঁদ’। কবিতাও যেমন লিখেছেন, লিখেছেন ‘ইংরেজি সহজ পাঠ’। লীলা রায়ের কাজের ব্যাপ্তিকে আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি, তাঁর লেখালেখি এবং অনুবাদ নিয়ে খুব একটা ওয়াকিফ-হাল ও নই। হয়ত ভবিষ্যৎ-এও অন্নদাশঙ্করের সহধর্মিণী হিসাবেই পরিচিতি থেকে যাবে লীলার।
মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়
লীলা রায়ের ন’বছর পর চেকোস্লোভাকিয়া থেকে ভারতে এসে পৌঁছন মিলাডা। অবনীন্দ্রনাথের নাতবৌ তিনি, শিশুসাহিত্যিক এবং সংখ্যাতত্ত্ববিদ মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী। উচ্চশিক্ষার্থে লন্ডনে গেছিলেন দু’জনেই, সেখানেই মোহনলালের সঙ্গে মিলাডার আলাপ। মিলাডারও কাজের পরিসরটি অত্যন্ত বিস্তৃত। মৌচাক এর মতন ছোটদের পত্রিকায় গল্পও লিখেছেন, আবার নাগাল্যান্ডের আদিবাসীদের জীবনযাত্রা নিয়ে বিস্তর ডকুমেন্টেশনও করে গেছেন (পিলগ্রিমেজ টু দ্য নাগাজ বোধহয় ওনার সবথেকে বিখ্যাত বই)। নাগাল্যান্ডে গিয়ে কিছু চমৎকার ফটোও তুলেছিলেন মিলাডা, তার কিছু দেখা যাবে এখানে। সাহিত্য এবং সমাজ চর্চার পাশাপাশি সংসারটিও দিব্যি চালিয়ে গেছেন মিলাডা, ঠিক লীলা রায়ের ধাঁচেই। বন্ধু এবং শ্রদ্ধাস্পদ ইন্দিরা চক্রবর্তীর কাছে শুনেছি মিলাডা তাঁর মেয়ে ঊর্মিলাকে পৌঁছতে এবং নিয়ে আসতে প্রায়ই উপস্থিত হতেন ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ে।
লীলা রায় শোনা যায় তাঁর সন্তানদের দশ বছর হওয়ার আগে বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা শিখতে দেন নি। ঊর্মিলা কিন্তু জানিয়েছেন মা’র দৌলতে তিনি এবং তাঁর সহোদর মিতেন্দ্র চেক এবং বাংলা দুটো ভাষাই শিখেছিলেন। মিলাডা এবং মোহনলালের জন্যই অবশ্য গড়পড়তা বাঙালিরও চেক্ সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে। মিলাডার জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল। প্রতিষ্ঠাতা সতীকান্ত গুহর অনুরোধে মিলাডা সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নার্সারি বিভাগে শিক্ষকতার ভার নেন। যে সময় শিশুদের ডায়েট নিয়ে সচেতনতা ছিল না বললেই চলে, মিলাডা তখন স্বেচ্ছায় কচিকাঁচাদের জন্য ডায়েট প্ল্যানও বানিয়ে গেছেন। এ দেশে আসার এক বছরের মধ্যেই দ্য ক্যালকাটা মিউনিসিপাল গেজেট-এ মিলাডা এই নিয়ে একটি প্রবন্ধও লেখেন, ‘দ্য অ্যাকটিভ চাইল্ড – দ্য হেলদি চাইল্ড’।
তিন বছর আগে চলে গেছে মিলাডার জন্মশতবর্ষ, আনন্দবাজারের কলকাতা কড়চায় দু’টি পরিচ্ছেদ ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পেলাম না ইন্টারনেটে।
এলেন রায়
এলেন গটসচাকের সঙ্গে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আলাপ জার্মানিতে। এলেনের জন্ম অবশ্য প্যারিসে, এবং জন্মেছিলেন এক ইহুদী পরিবারে। কুমারী জয়াবর্ধনে তাঁর ‘দ্য হোয়াইট ওম্যান’স আদার বার্ডন’ বইয়ে জানিয়েছেন মানবেন্দ্রনাথ রায়ের মতনই এলেন-এরও ঝোঁক ছিল র্যাডিকাল পলিটিক্সের দিকে, এবং এই ঝোঁক সেই কুড়ি একুশ বয়স থেকেই। ২০১৬ তে যখন দেশ জুড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে, তখন এলেনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিটি আমাদের আরোই ভাবিয়ে তোলে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সারা ইউরোপের দুর্দশার এবং সামাজিক বৈষম্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে এলেন দায়ী করেছিলেন ‘the absurdity of hostile patriotisms’ কে। এ বৈষম্য ঘোচানোর জন্য এলেন বিশ্বাস করতেন বিপ্লব ছাড়া পথ নেই। মনে রাখা ভালো যে এলেনের সঙ্গে আলাপের কিছুদিন আগেই জার্মান ভাষাতেই প্রকাশিত হয়েছে মানবেন্দ্রনাথের লেখা বই, ‘রেভলিউশন অ্যান্ড কাউন্টার রেভলিউশন ইন চায়না’।
১৯৩০-এ মানবেন্দ্রনাথ দেশে ফিরে আসেন, ৩১ সালে রাজদ্রোহের অভিযোগে বারো বছরের কারাদন্ড হয় মানবেন্দ্রনাথের। পরে মেয়াদ কমে সাজা দাঁড়ায় ছ’বছরের, মানবেন্দ্রনাথ ছাড়া পান ১৯৩৬-এ। সাজা কমে যাওয়ার পেছনেও এলেনের কিছু অবদান থাকতে পারে, এলেনের অনুরোধেই একাধিক ভারতীয় এবং ইউরোপীয়ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চিঠি লিখে মানবেন্দ্রনাথের কারাদন্ড কমানোর অনুরোধ জানান। এলেন মুম্বই এসে পৌঁছন ১৯৩৭-এ, সেই বছরের বিয়ে করে দু’জনে দেরাদুনে চলে যান। আর এই সময় থেকেই দু’জনেই কমিউনিজম থেকে সরে আসতে থাকেন, প্রচার করতে শুরু করেন ‘র্যাডিক্যাল হিউম্যানিজম’ বা ‘নব মানবতাবাদ’ নামক এক নতুন রাজনৈতিক মতবাদের। মানবেন্দ্রনাথ জেল থেকে বার্লিনে এলেনকে অনেক কটি চিঠি লিখেছিলেন, এলেনের প্রায় একার উদ্যোগেই ১৯৪৩-এ সেই সব চিঠি একত্রিত হয়ে প্রকাশিত হয় ‘লেটারস ফ্রম জেল’ নামে। কয়েক বছর পর থেকেই বেরোতে শুরু করে সেই বিখ্যাত পত্রিকা ‘র্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট’, ৫৪ সালে মানবেন্দ্রনাথ মারা যাওয়ার পর প্রায় ছ’বছর ধরে এলেন ছিলেন সেই পত্রিকার সম্পাদক।
বিপ্লবী তরুণী এলেনের মানবিক দিকগুলো নিয়ে মানবেন্দ্রনাথের শিষ্য এবং জীবনীকার শিবনারায়ণ রায় অনেক কিছু বলেছেন। তাঁকে একটু উদ্ধৃত করি এখানে, ”মানবেন্দ্রনাথের সঙ্গে কোনো অমিলই যে কখনো বিরোধের আকার নেয় নি তার একটা কারণ তাঁর অসামান্য ব্যক্তিত্বের প্রতি আমার সুগভীর শ্রদ্ধা, এবং অন্য কারণ মানবেন্দ্রপত্নী এলেনের সতর্ক স্নেহ’। মানবেন্দ্রনাথ মারা যাওয়ার পরেও এলেনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় ছিল মানবেন্দ্রনাথের প্রায় সব রাজনৈতিক সতীর্থ এবং শিষ্যদের। হয়ত লীলা রায় বা মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতনই এলেন-ও পণ করেছিলেন সারা জীবন ধরে নিজেকে অফুরন্ত কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত রাখার, সে সুযোগ অবশ্য তিনি পাননি। ১৯৬০ সালের ১৪ই ডিসেম্বর দেরাদুনেই রহস্যজনক ভাবে খুন হন এলেন, আততায়ী ছিল তাঁর এবং মানবেন্দ্রনাথের পূর্বপরিচিত। রাজনৈতিক হত্যাকান্ড না নিছক ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ড তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে এখনো।
মুজতবা আলী’র ঘটনাটা আগে কোথাও পড়েছি । উনি সাইকেলে চেপে এসেছিলেন । আর কথাগুলো সম্ভবত মনে মনে বলেননি । 🙂
LikeLike
হ্যাঁ, মুজতবা আলীর পক্ষে সেটা করা একদমই সম্ভব। পয়েন্টটা তোলার জন্য ধন্যবাদ, একবার চেক করে দেখতে হচ্ছে।
LikeLike
চমৎকার লেখা! ‘মেম বউ’ অন্তত এমন লেখা পড়ার সুযোগ করে দিল।
LikeLike
অনেক ধন্যবাদ মধুমিতা দি! মেম বউ সবাইকেই নাড়িয়ে দিয়ে গেছে।
LikeLike
বা:, বেশ গুছিয়ে লিখেছ প্রবীর। ভালো লাগলো। আমিও কাল ফেসবুকে ওই মেমবউ ভিডিও-টুকরোটা দেখে ভাবছিলাম এইসব “মেমবউ” দের কথা।
LikeLike
আর কারোর নাম মনে পড়লে লিখে দেবেন নীলমণি দা।
LikeLike
চমৎকার লাগলো| ভুলে যাওয়া মেমবউদের নিয়ে ঝরঝরে মনোগ্রাহী লেখা|
LikeLike
কি সৌভাগ্য! এত ভালো লেগেছে যখন বর্মী বাক্সটা কোথায় আছে একটু বলে যান।
LikeLike
এই নে প্রবীর 🙂
https://bormibaksho.wordpress.com
LikeLike
খুব ভাল। শুধু, এমএন রায়ের ওটা র্যাডিকাল হিউমানিজম হবে না?
LikeLike
রায়া – অনেক ধন্যবাদ ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। হ্যাঁ, ওটা র্যাডিকাল হিউমানিজম -ই, বাংলাটায় তাই নব মানবতাবাদ ই লিখেছিলাম। আসলে ওনাদের পার্টির নাম ছিল র্যাডিকাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, লিখতে গিয়ে একটা মিক্স-আপ হয়ে গেছিল।
LikeLike
Bhaggis trailer ta dekhechili… darun 🙂
LikeLike
কিন্তু তুই কি দেখেছিস? না দেখে থাকলে এক্ষুনি সব কাজ থামা।
LikeLike
অনেক ধন্যবাদ এ লেখাটার জন্য , খুব ভালো লাগলো 🙂
LikeLike
ফিডব্যাক দেখে আমারও খুব ভালো লাগল প্রদীপ্ত, অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
LikeLike
বড় ভাল লিখেছ, প্রবীর। তোমার সোনার কি-বোর্ড হোক। তোমার পড়ার পরিধি সত্যি বিস্ময়কর। এত বিচিত্র জিনিস নিয়ে এমন অফুরান কৌতূহল এই প্রজন্মে খুব বেশি মানুষের নেই। দারুণ লিখছ। দারুণ পড়ছ। দারুণ ভাবছ।
শুধু, ‘ওনার’ লিখো না, ‘ওঁর’ লিখো।
LikeLike
আমি জানিস তো ওঁর-ই লিখতাম। কয়েক বছর আগে গুরুচন্ডালিতে গান্ডু সিনেমার রিভিউ লেখার সময় একজন বললেন ওঁর কথাটা কানে লাগছে, ওটা ওনার হওয়া উচিত। ফিডব্যাকটা বোধহয় অবচেতনে রয়ে গেছিল, আমিও চেক না করেই তারপর থেকে ‘ওনার’ লিখছি।
LikeLiked by 1 person
খুব ভালো লেখা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আরও লিখুন। ভালো থাকুন।
LikeLike
লেখাটা একই সঙ্গে তথ্যবহুল আর মনোগ্রাহী! ভাল লাগল।
LikeLike
খুব ভালো লিখেছেন ভাই। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আরও লিখুন। ভালো থাকুন।
LikeLike
নেলী সেনগুপ্ত ar লীলা রায় bepare jantam shudhu..thanks a lot..anek kichhu janlam
LikeLike
খুব ভালো লেখার ভঙ্গি, যার ফলে শেষ অব্দি পড়তে হয়। আর, হয়তো এসব কথা কোথাও খুঁটিয়ে পড়ার আগ্রহ হ’ত না, অথচ একসঙ্গে সব পাওয়া হ’ল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
LikeLike
kichhui to jantam na, tobu kichhu janta parlam. e rokom gobeshonagar pulic er jonyo unmukto kore deoyay osongkhyo dhonyobad
LikeLike
khub shundor lekha. dhonnobaad.
LikeLike
অতি জঘন্য একটি সোপের ট্রেলার এমন চমৎকার তথ্য বহুল লেখা তৈরি করল দেখে মজাই পেলাম । লীলা রায় কে দেখেছি। ঊর্মিলাদির জীবজন্তু প্রীতি মনে পড়ল অনেকদিন পর । অমিয় চক্রবর্তীর স্ত্রী হৈমন্তীর কথা এলে ভালো লাগত ।
LikeLike
অনেকদিন পর তোমার ব্লগে এলাম। আর এসেই অনেক কিছু জানতে পারলাম। হেনরিয়েটা, নেলী সেনগুপ্ত আর লীলা রায়ের কথা জানতাম, বাকিরা অজানা ছিলেন।
LikeLike
khub valo laglo.Harye jaoa itihas tule anar jonnyo asankho dannybad.
LikeLike
i think 2 other great ladies needed a mention here
though they might not be the typical “membou”…emily schenkl the spouse of netaji and the japanese wife of rashbihari bose..coz everybody knows behind every great man there is a greater woman (the reverse may also be true ..don’t take it otherwise)
LikeLike
missed out on 2 other great ladies..emily schenkl, the spouse of netaji and the japanese wife of rashbihari bose
LikeLike
দারুণ
LikeLike
Khub sundor lekhaa.. eto khabor paromita@gwu.edu kothay bhaai??
LikeLike
Darun lekha.aaro kichu tothyo diye ekta boi prokash korun na…..tahole ei sob mem boura jNara hariye giechen ba jachchen amader mon theke, tNader somporke aaro aaro beshi jante parbo….chhotobelay annadashonkor ray ar lila ray er lekha portam…ajkal r khNujei paina 😦 dhonyobad aapnake.
LikeLike
চমৎকার লেখা। ধন্যবাদ । Facebookএ এই লেখাটা share হচ্ছিলো – সেই সুবাদে একটা ভালো ব্লগ খুঁজে পেলাম।
LikeLike