বাংলাদেশের সুপরিচিত প্রবাসী ব্লগার এবং যুক্তিবাদী লেখালেখির আকর ‘মুক্তমনা’ নামক ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে গত পরশু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে দেশী চপার দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে কিছু দুষ্কৃতী, খুন করতে না পারলেও গুরুতর আহত করেছে অভিজিৎ এর সহধর্মিণী রাফিদা আহমেদ বন্যা কে। সরকারী কনফার্মেশন না এলেও ট্যুইটারে এক প্রায় অজানা ইসলামিক মৌলবাদী সংগঠন এর দায় নিয়েছে। কিন্তু কেন এই নৃশংস হত্যাকান্ড? সোশ্যাল মিডিয়া এবং মূলত বাংলাদেশের খবরের কাগজগুলির বক্তব্য অনুসারে নাস্তিক্যবাদের সমর্থনে অভিজিৎ এ যাবত যা লেখালেখি করে এসেছেন, মৌলবাদী সংগঠনগুলির কাছে তা ইসলাম ধর্মের অবমানননার নামান্তর মাত্র।
ধৃ ধাতু এবং মন প্রত্যয় যোগ করে পাওয়া এক শব্দ ‘ধর্ম’, আদি অর্থে ‘যা মনে ধারণ করা হয়’ – ব্লগার অভিজিৎ যে যুক্তিবাদী দর্শনের ভিত্তিতে এক দশকের-ও বেশী সময় ধরে লিখে গেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে বলাই যায় যে ব্যুৎপত্তিগত অর্থে অভিজিৎ ও এক বিশেষ ধর্মাবলম্বী, আর সেই ধর্মেই বিশ্বাস রেখেছেন বন্যা আহমেদ-ও (হয়ত সেই সূত্রেই একে অপরের কাছে আসতে পেরেছিলেন তাঁরা); সে অর্থে অভিজিৎ এর যোগ্য সহধর্মিণী তিনি। বন্যা নিজেও ব্লগার – আধুনিক বিবর্তনবাদ নিয়ে বন্যা সাম্প্রতিক কালে যেরকমটি ভাবে লিখে গেছেন তা দু’বাংলার ব্লগোস্ফিয়ারেই প্রায় অতুলনীয়, এসব লেখাই তাঁর জ্ঞানের দীপ্তিতে ভাস্বর। আবার সেই বন্যাই খুব ঘরোয়া আড্ডা দেওয়ার স্টাইলে হাসাহাসি করেছেন দীপক চোপড়ার ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ সুলভ বৈজ্ঞানিক ভন্ডামি নিয়ে।
অভিজিৎ এবং বন্যার কথায় ফিরে আসছি কিন্তু তার আগে এই খুনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা বলা দরকার। ইসলামিক মৌলবাদ বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়, নতুন নয় সংখ্যালঘু হিন্দু এবং পার্বত্য উপজাতিদের ওপর ক্রমান্বয়ে অত্যাচার – পূর্ব পাকিস্তানের গোড়ার সময় থেকেই গ্রামে গ্রামে স্লোগান শোনা গেছে “একটা দুটা হিন্দু ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর”, চট্টগ্রাম বলুন কি উত্তরবঙ্গ হেন জায়গা নেই যেখানে চাকমাদের মতন উপজাতিদের ওপর অত্যাচার চলছে না। অত্যাচার চলছে না বলাটাও ভুল হবে, অত্যাচার উত্তরোত্তর বাড়ছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে ৪৬-৪৭ এবং তার অব্যবহিত পর পরেই পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার দেড়শ দুশো বছর ধরে হিন্দু জমিদারদের শোষণের ফল (যেটা প্রায় সত্যি কথা), স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমবর্ধমান অত্যাচারকে কোনো যুক্তিজালেই ফেলা যাবে না। গত এক দশক ধরে অবশ্য এই কলঙ্কিত বৃত্তান্তে এক অন্য ডাইমেনসন যোগ হয়েছে – শুধু সংখ্যালঘু নন, সংখ্যাগুরু ধর্মাবলম্বী অসংখ্য মানুষকেও নির্বিচারে আক্রমণ করা হয়েছে মুখ বুঝে ধর্মের ডিকটাম মেনে না নেওয়ার জন্য। প্রবীণ বিদ্বজন হন বা উৎসাহী প্রাগম্যাটিক তরুণ, স্যাটায়ারিস্ট হন বা র্যাশনালিস্ট, প্রাবন্ধিক হোক বা ব্লগার – প্রশ্ন করলেই, খোঁচা দিলেই, ঔদ্ধত্য দেখালেই নেমে এসেছে দেশী চপারের কোপ কি পেট্রোল বোমার বিস্ফোরণ।
কিন্তু এসবের থেকেও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া বা যে কোনো ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট ওয়ালা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার তথাকথিত শিক্ষিত তরুণ এবং যুবকদের এই ঘাতকদের প্রতি নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থন দেখতে পাওয়া। অভিজিৎ খুন হওয়ার পর পরেই ফেসবুক এবং ট্যুইটার ভেসে গেছে ‘ A head-shot a day, keeps an atheist away’ গোছের লাইনে, অগুন্তি মানুষ এসে লাইক দিয়ে গেছেন প্রায় অবাস্তব ঠেকা এহেন প্ররোচনামূলক মন্তব্যে । এত হাজার হাজার জল্লাদদের একসঙ্গে দেখতে পাওয়াটাও অভিজ্ঞতা। এঁদের ধর্ম, এঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য ডেমোগ্রাফিক ডিটেইলস নিয়ে আমার সত্যি কিছু যায় আসে না, কিন্তু যখন দেখি অভিজিৎ এর চূর্ণ মাথার ভয়ঙ্কর রকম গ্রাফিক ছবিকেও এঁরা হাসতে হাসতে ‘thumbs-up’ দেখিয়ে জানিয়ে যাচ্ছেন এবার পালা আসিফ মহিউদ্দীনের, তখন প্রশ্ন জাগে বাংলার মাটিতে এই মধ্যযুগীয় ঘাতকের দল পঙ্গপালের মতন গজিয়ে চলেছে কি ভাবে? এরাও দু’বেলা ভাত ডাল খেয়ে ছুটছে কলেজে এঞ্জিনীয়ারিং বা ফিজিক্স পড়তে, সারা দিন ধরে চর্চা চালাচ্ছে মেসি আর রোনাল্ডোর স্কিলসেট নিয়ে, আড়াল খুঁজে নিয়ে বাকি পৃথিবীর মতই দেখে নিচ্ছে বিদেশী পর্নোগ্রাফি, আর এসবের মধ্যেই টুক করে জানিয়ে যাচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা দেখাতে এলে বা ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন তুললে বইমেলা চত্বরেই গড়াগড়ি খাবে আমার আপনার লাশ। কারা এরা? এত নৃশংসতা, এত অসহিষ্ণুতা নিয়ে এরা বেঁচে আছে কি করে?
এহেন অসহিষ্ণুতা মাঝে মাঝে এ বাংলাতেও দেখে থাকি বলে প্রশ্ন রয়ে যায় – কোন জায়গায় আমরা ভুলটা করছি? যে বিরোধী দল মৌলবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অত্যাচার চালাচ্ছে যুক্তিবাদীদের ওপর তারা তো দোষীই, যে সরকার ব্লগারদের ওপর আক্রমণ ঠেকাতে ব্লগারদেরই জেলে পুরছে বা ব্লগ লেখাটাই বন্ধ করে দেওয়ার তাল ঠুকছে তাদের দোষের কথা লিখতে যাওয়াটাই বাহুল্য কিন্তু যে ছেলেরা নিজেদের দেশের মাটিতে বড় হয়ে ওঠা মানুষের মৃত্যুতে নৃশংস উল্লাস প্রকাশ করছে তাদের বাড়ির লোকেদের-ও নিশ্চয় কোথাও একটা দোষ আছেই, দোষ আছে তাদের স্কুলের টিচারদের, তাদের কলেজের প্রফেসরদের। আমি এখনও এ কথা মানতে রাজি নই যে নিজের বাবা-মা-ভাই বোন বা শিক্ষকদের থেকেও বেশী প্রভাব বিস্তার করতে পারে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ধর্মদাসের দল। বড় হওয়ার সময়ে আমি নিজে অন্তত আমার কাছের লোকেদের দেখিনি ধর্মনিরপেক্ষতা কি পুরুষতান্ত্রিকতা নিয়ে একটা দুটো কথাও উচ্চারণ করতে – এ অভিজ্ঞতা আমার একার নয়, আমার প্রজন্মের অধিকাংশেরই। কিন্তু এই অত্যন্ত দরকারী বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আগের প্রজন্ম একটা কথাও না বলার যে বিলাসিতা দেখাতে পেরেছেন, সেই বিলাসিতা দেখানোর জায়গায় আমরা নেই। জানি না এই ক্ষুদ্র ব্লগ থেকে কতজনের কাছে পৌঁছতে পারা যাবে কিন্তু দেশধর্মনির্বিশেষে যারা এ লেখা পড়ে উঠতে পারবেন, আমার অনুরোধটা মনে রাখবেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, কিন্তু নিজেকে মানুষ প্রমাণ করার জন্য মৌলিক যে দায়িত্বগুলো তা এই ২০১৫ তেও আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত নয়। হয়ত কেঁচে গণ্ডূষ-ই করতে হবে কিন্তু তা ছাড়া আর উপায় নেই। ভাবীকালের রাজনীতিক বলুন বা ধর্মগুরু বা লিবারল ব্লগার প্রত্যেকেই তো কোনো একটা পরিবার থেকেই উঠে আসবেন – সম্পূর্ণ সংস্কারমুক্ত যদি নাও হওয়া যায় অন্তত একটু ধৈর্য ধরে অন্য মতামতগুলো শোনা, সেটাই তো বিশাল পাওনা।
বিশাল পাওনা তো নিশ্চয়, আর সেই জন্যই অভিজিৎ রায়ের খুন আমাদের এত নাড়া দিয়ে গেছে। এত অসহিষ্ণু একটা পরিবেশে অভিজিৎ যে সাহস নিয়ে লড়ে গেছেন মৌলবাদী, ধর্মান্ধ মানুষগুলির সাথে তা দু’বাংলার কোটি কোটি মানুষের কাছে শিক্ষণীয়। ক্রমাগত মৃত্যুর হুমকি এসেছে, যাঁদের বিরুদ্ধে এ লড়াই তাঁরা অভিজিৎ এর লেখা একটা লাইন-ও পড়তে অস্বীকার করেছেন, তাঁর লেখা বই তুলে নেওয়া হয়েছে বাজার থেকে কিন্তু অভিজিৎ দমেন নি। ফের নতুন করে শুরু করেছেন, ধৈর্য ধরে ফের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কেন তাঁর কথাগুলোও শোনা দরকার। অভিজিৎ এর সাহস দেখবার মতন, কিন্তু তার থেকেও বেশী করে দেখার ব্যাপার তাঁর ধৈর্য – এরকম মানুষ লাখে হয়ত একজন মিলবে আর তাই জন্যই অভিজিৎ এর চলে যাওয়া দু’বাংলার মানুষদের জন্যই এক অপূরণীয় ক্ষতি। সাধারণ মানুষদের জন্য লেখা পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমসময়েই নাস্তিকদের বক্তব্য ঠাঁই পেয়েছে কিন্তু ধরুন অনাগত কালের একটা দিনে দেখা গেল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ঝুঁকে পড়েছেন নাস্তিক্যবাদের দিকে, যে কোনো ধর্মাবলম্বী মানুষই তাঁদের ক্রোধের শিকার হচ্ছেন তখনো তো একজন অভিজিৎ কেই উঠে আসতে হবে যিনি ধৈর্য ধরে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে ধর্ম মানেই মূর্তিপূজা কি অন্ধ ব্যক্তিপূজা নাই হতে পারে – ধর্মের স্পিরিচুয়াল দিকটাকে অস্বীকার করা যায় না, সেটুকু সরিয়ে নিলে বহু প্রান্তিক মানুষ তো বটেই ভোগবহুল জীবনে যারা অভ্যস্ত তাঁদের-ও অনেকেই বাঁচার ইচ্ছাটাই হারিয়ে ফেলবেন।
অনেকেই অভিজিৎ রায়কে একগুঁয়ে নাস্তিক বলে থাকেন, অভিজিৎ এর বইগুলো পড়লে কখনো কখনো সেটা মনে হতেও পারে – যেমন ধরুন ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটি শুরুই হচ্ছে বাংলাদেশের আরেক ব্লগার জুবায়ের অর্ণব এর একটি উক্তি দিয়ে, “নাস্তিক্যবাদ ধর্ম হলে বাগান না করাও একটি শখ, ক্রিকেট না খেলাও একটি খেলা, কোকেইন সেবন না করাও একটি নেশা”। কিন্তু অভিজিৎ এর বহু লেখা পড়েই আমার মনে হয়েছে ধর্ম নিয়ে গোঁড়া সংস্কারের বিরুদ্ধেই তাঁর মূল লড়াই, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ইচ্ছা বলে এযাবৎ যা কিছু আমাদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে সেই বোঝা টেনে নামানোই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য – আমি ভুল হতেও পারি কিন্তু ধর্মের therapeutic values কে মনে হয় না অভিজিৎ অস্বীকার করতেন বা অন্ততপক্ষে বিতর্কের একটা মঞ্চ নিজেই প্রস্তুত করে নিতেন। অপেক্ষাকৃত লিবারল রাজ্য বা দেশে যারা আছেন তাদের পক্ষে চট করে বোঝা একটু মুশকিল হতে পারে যে অভিজিৎ এর এই প্রয়াস কেন ব্যতিক্রমী এবং সময়বিশেষে প্রায় সুপার-হিউম্যান সুলভ। বোরখা কেন পরতেই হবে বা দত্তকসন্তান কেন গ্রহণ করা যাবে না এধরণের আপাতনিরীহ প্রশ্ন করলেই যেখানে ঘরবাড়ি জ্বলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা অভিজিৎ সেখানে প্রশ্ন তুলেছেন কোরানের আয়াত নিয়ে, যুক্তি দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছেন ধর্মগ্রন্থের কনটেন্টের-ও কেন বিশ্লেষণ হওয়া দরকার। এই নিরন্তর প্রশ্ন, নিরন্তর যুক্তিবোধ দিয়ে অভিজিৎ পেরিয়ে গেছেন দেশ-কাল-ধর্মের গন্ডী। যেমন অক্লেশে জাকির নায়েকের সমালোচনা করেছেন বিবর্তনবাদ নিয়ে ৭ মিনিটের বক্তৃতায় ২৮টা মিথ্যা কথা বলার জন্য, তেমনই বাল্য বিবাহ নিয়ে বিবেকানন্দের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য তুলে ধরে দেখাতে চেয়েছেন ধর্মগুরুরা সর্বজনশ্রদ্ধেয় হলেও আসলে দোষেগুণে মেশানো এক মানুষ আবার একাধিক আমেরিকান বিজ্ঞানীর কড়া সমালোচনা করেছেন খ্রীষ্টান ধর্মকে বিজ্ঞানের সাহায্যে ভ্যালিডেট করার ভন্ড প্রচেষ্টা হেতু। কথাপ্রসঙ্গে জানাই যে বন্যা আহমেদের মতনই অভিজিৎ এর-ও অন্যতম প্রিয় বিষয় ছিল বিবর্তনবাদ – মুক্তমনার ওয়েবসাইট হোক কি নিজের বই, অভিজিৎ এর মেধাচর্চার অসংখ্য নমুনা আমরা পেয়েছি বিবর্তনবাদের ওপর একাধিক লেখায়।
নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী র্যাশনালিস্টদের চিন্তাভাবনা, যুক্তিবোধ ইন্টেলেকচুয়াল গন্ডী পার করে সাধারণ মানুষদের কাছে এখনো পৌঁছে দেওয়া যায় নি – একজন রিচার্ড ডকিন্স কি একজন ক্রিস্টোফার হিচেন্স কে পেতে পশ্চিমী দুনিয়ার-ও অনেক সময় লেগেছে যদিও তাঁরাও পারেননি তৃণমূল স্তরে তাঁদের লেখাপত্রকে ছড়িয়ে দিতে। মুক্তমনা-ও সে জায়গায় পৌঁছতে পারেনি এখনো কিন্তু অভিজিৎ সে চেষ্টাটাই শুরু করে গেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পৌঁছতে চেয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম বা প্রবাসের লিবারল গোষ্ঠীর বাইরেও। অভিজিৎ এর মৃত্যু একটা বিশাল বড় ধাক্কা কিন্তু ভাবীকালের অভিজিৎ দের বাঁচাতে গেলে লেখালেখিই একমাত্র রাস্তা। সহমর্মী সবার কাছেই অনুরোধ, আসুন মাসে একটা করে হলেও লেখা লেখি – মুক্তমনার মতন প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মেই হোক কি নিজের ব্লগে সেই প্রশ্নগুলোই তুলি যেগুলি অভিজিৎ তুলে এসেছেন। বন্যা আহমেদের মতনই সরল ভাষায় ক্যান্সার নিয়ে লিখি, যাতে বাবাজীদের হাড়ের গুঁড়ো মেশানো ওষুধ কিম্বা হুজুরদের মন্ত্র পড়া কবচের ওপরে দু’বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষগুলিকেও বিশ্বাস করে না থাকতে হয়। বন্যা এখনো গুরুতর আঘাতে শয্যাশায়ী, মানসিক আঘাতটিও এতই তীব্র হয়ত তা থেকে পরিত্রাণ পেতেও বহু দিন লেগে যাবে। কিন্তু অভিজিৎ রায়ের লেগ্যাসি কে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর ভূমিকা অপরিহার্য, মুক্তমনায় বন্যার লেখা আবার দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকব।
আর শুধু লেখালেখিই বা কেন? বন্ধুপ্রবর এবং শিল্পী অভীক কুমার মৈত্রর ছবিটি দেখুন, হাজার কথা বলে দিয়েছে একটা ফ্রেমের মধ্যে, ভাবিয়েছে এবং ভাবাবে অনেক অনেক মানুষকে। নাই বা হলেন তাঁরা নাস্তিক, তাঁরা হিন্দু না মুসলমান তাতেও কিছু এসে যায় না, পশ্চিমবঙ্গে থাকেন না পূর্ববঙ্গে তাও ম্যাটার করে না কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে মেনে নেবেন এটুকুই আশা।
আর হ্যাঁ, মানুষের জন্য রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের জন্য মানুষ নয় – তাই রাষ্ট্রের শত গড়িমসি সত্ত্বেও আমাদের দায়িত্ব অভিজিৎ এর খুনী, বন্যার আঘাতকারীদের চূড়ান্ত শাস্তি ত্বরান্বিত করা। লিখতে থাকুন, ঘরোয়া আলাপচারিতায় পরিচিতদের মনে করাতে থাকুন অভিজিৎ এর খুনীরা এখনো বাইরে, যারা বাংলার মাটিতে মধ্যযুগীর বর্বরতা ফিরিয়ে আনছে বার বার।
সাধারণ মানুষদের জন্য লেখা পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমসময়েই নাস্তিকদের বক্তব্য ঠাঁই পেয়েছে কিন্তু ধরুন অনাগত কালের একটা দিনে দেখা গেল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ঝুঁকে পড়েছেন নাস্তিক্যবাদের দিকে, যে কোনো ধর্মাবলম্বী মানুষই তাঁদের ক্রোধের শিকার হচ্ছেন তখনো তো একজন অভিজিৎ কেই উঠে আসতে হবে যিনি ধৈর্য ধরে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে ধর্ম মানেই মূর্তিপূজা কি অন্ধ ব্যক্তিপূজা নাই হতে পারে – ধর্মের স্পিরিচুয়াল দিকটাকে অস্বীকার করা যায় না, সেটুকু সরিয়ে নিলে বহু প্রান্তিক মানুষ তো বটেই ভোগবহুল জীবনে যারা অভ্যস্ত তাঁদের-ও অনেকেই বাঁচার ইচ্ছাটাই হারিয়ে ফেলবেন। – porchhi ar shommotishuchok matha nere jachchhi. protyekta shobder shathe ekmot. The need to spread (if not code and preach) non-superstitious. rationale, logic cum belief system (atheism?) and at the same time retain a root for human kind so that they still belong to something, and connected (not tied down) by some philospohy.
LikeLike
প্রবীরেন্দ্র, লেখাটার বিষয়বস্তু যা, তাতে ভাল লেগেছে এ কথাটা বলাটা বোধহয় ঠিক হবেনা। বাচালতা হবে। তাই সে কথাটা বললাম না। তবে লেখাটার জন্য আমার শুভেচ্ছা জানবেন। এরকম দিকে দিকে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। যাতে একজন অভিজিতের জায়গায় আরো এক হাজার অভিজিৎ জেগে ওঠে। আক্ষরিক অর্থেই নাস্তিকদের এখন রক্তবীজ হওয়ার প্রয়োজন।
‘বড় হওয়ার সময়ে আমি নিজে অন্তত আমার কাছের লোকেদের দেখিনি ধর্মনিরপেক্ষতা কি পুরুষতান্ত্রিকতা নিয়ে একটা দুটো কথাও উচ্চারণ করতে – এ অভিজ্ঞতা আমার একার নয়, আমার প্রজন্মের অধিকাংশেরই। কিন্তু এই অত্যন্ত দরকারী বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আগের প্রজন্ম একটা কথাও না বলার যে বিলাসিতা দেখাতে পেরেছেন, সেই বিলাসিতা দেখানোর জায়গায় আমরা নেই। ’
– এই কথাটা স্পষ্ট করে বলতে পারার জন্য অভিনন্দন। একেবারে ১০০% খাঁটি।
LikeLike
http://www.shodalap.org/smraihan/18502/
LikeLike